অ্যামেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ যুগের শুরু হয় ১৯২৯ সালের ২৪ শে অক্টোবর। ঐদিন নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের প্রায় ১৩ মিলিয়ন শেয়ার একদিনেই বিক্রি হয়ে যায়। ইতিহাসে এই দিনটি “ব্ল্যাক থার্স্টডে” নামে পরিচিত। এই ঘটনাতে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে অ্যামেরিকার ব্যাংকগুলো। শেয়ার মার্কেটকে চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলো একজোট হয়ে বড় অংকের বিনিয়োগ করে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। এরপর ২৯ শে অক্টোবর আরও বড় ধ্বস নামে। একদিনে বিক্রি হয়ে যায় ১৬ মিলিয়ন শেয়ার। দেখতে দেখতে অ্যামেরিকার অর্থনীতি বালির প্রাসাদের মত ধ্বসে পরে।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। দেউলিয়া হয়ে যায় শত শত ব্যাংক। প্রায় দেড় কোটি মানুষ হঠাৎ করে বেকার হয়ে পরে। গৃহহীন হয়ে পরে হাজার হাজার মানুষ । তৈরি হয় শত শত বস্তি। অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পায় মারাত্মকভাবে। ছিনতাই, খুন, বা চুরির মত অপরাধ দিন দিন বাড়তেই থাকে। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস “অফ মাইস অ্যান্ড ম্যান” পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন- ১৯৩০ এর দশকে অ্যামেরিকার হাজার হাজার মানুষ কাজের আশায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াত। বহু মধ্যবিত্ত পরিবার একদম আক্ষরিক অর্থেই পথে বসে যায়। আধুনিক অর্থনীতির ইতিহাসে এটাই হলো সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দা। এই মন্দা ইতিহাসে “দ্যা গ্রেট ডিপ্রেশন” নামে পরিচিত।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো- মন্দা শুরু হওয়ার আগের দশটা বছর ছিল অ্যামেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধির সময়। এ সময় অ্যামেরিকানরা দুই হাতে খরচ করেছে। ঘরে ঘরে ছিল বিলাসবহুল পণ্যের ছড়াছড়ি। রেডিও, গাড়ি, রেফ্রিজারেটর এগুলো তখন অ্যামেরিকানদের কাছে মামুলি ব্যাপার। অনেকেই তখন চার-পাঁচটা গাড়িও কিনত। এইসব মাত্রাতিরিক্ত বিলাসিতার পেছনে ব্যাংকগুলোর হাত ছিল। ব্যাংকগুলো খুব সহজ শর্তে ঋণ দিত। মানুষের হাতে বেশ ভালো টাকা থাকার কারণে সমাজের নিম্নবিত্তরাও অহরহ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করত। আর এতে লাভও হতো নিশ্চিতভাবে। ফলে অনেক হত-দরিদ্র মানুষও নিজেদের বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ করে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করত। এই এক দশকের মধ্যে অ্যামেরিকাতে প্রায় ২৫০০০ নতুন ব্যাংক গড়ে উঠেছিল। দেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৯ হাজার। এক কথায় বলতে গেল এই দশকটা ছিল অ্যামেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধির সময়।
কিন্তু অ্যামেরিকানদের এই সুখ খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এক দশকের সোনালী দিনের শেষে মহামারির মত এসে হাজির হয় গ্রেট ডিপ্রেশন। মন্দার এই দিনগুলোতে বেশিরভাগ অ্যামেরিকান ভয়াবহ দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটিয়েছে।
কিন্তু টানা এক দশকের দুর্দান্ত অর্থনৈতিক উন্নতির পর হঠাৎ কেন এমন ভয়াবহ মন্দা শুরু হলো?
এই ভয়াবহ মন্দার জন্য আসলে একটি বিষয় দায়ী ছিল না। কোনো একটি বিষয়ের কারণে মন্দা হলে তা এত ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। স্টক মার্কেটের ধ্বস দিয়ে এই গ্রেট ডিপ্রেশন শুরু হয়। এটি ছিল ডিপ্রেশনের একটি বড় কারণ। এর সাথে ছিল ঐ সময়ের ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নীতি। স্টক মার্কেট ক্রাশের পর সরকার বেশকিছু নতুন আইন পাশ করে। সেই নতুন আইনগুলোর কারণেও এই মন্দা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তেমন একটি আইন ছিল Smoot–Hawley Tariff Act। এই সবকিছুর সাথে যোগ হয় দীর্ঘ এক খরা। এই খরা প্রায় দশ বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং খরার কারণে ফসলের উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছিল।
তবে অর্থনীতিবিদদের কাছে এই মন্দা আসলে এর ভয়াবহতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের অনেকেই মনে করেন এই মন্দা আসলে আধুনিক অর্থনীতিকেই ডিফাইন করে। আধুনিক অর্থনীতি কীভাবে চলে, কীভাবে সমৃদ্ধি লাভ করে, বা কী কারণে ধ্বসে পরে- সেটা আমরা ভালোমতো বুঝতে পেরেছিলাম এই মন্দার পর।
অর্থনীতির কিছু মৌলিক নীতি আছে যে নীতিগুলো ভঙ্গ করা হলে একটি দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়তে বাধ্য। আমরা এই আলোচনাতে সেই বিষয়টাতেই বেশি জোর দেব। এই আলোচনা শুরু করার আগে আমরা যদি মন্দার আগের পৃথিবীর অবস্থাটা জেনে নিই তাহলে আমাদের এই নীতিগুলো বুঝতে অনেক সুবিধা হবে। তাই চলুন ঘুরে আসি ১৯২০ সালের আগের পৃথিবী থেকে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পৃথিবীর রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেকখানি আলাদা। তখন ব্রিটিশ, ফরাসি, রাশিয়ান এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনেই ছিল ইউরোপ-এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল। ফলে যুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। এই যুদ্ধ চলেছিল চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির কারণে ইউরোপের এবং এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি একদম ভেঙে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ইউরোপ।
একটানা যুদ্ধের কারণে ইউরোপের কৃষি এবং শিল্প-কারখানাগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ফলে দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট। খাদ্যের মত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসেরও মারাত্মক ঘাটতি ছিল। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় অ্যামেরিকা। অ্যামেরিকা এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যবসা করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের তখন প্রচুর খাদ্য এবং অস্ত্রের প্রয়োজন ছিল। আর অ্যামেরিকা তখন ইউরোপে একচেটিয়াভাবে খাদ্য ও অস্ত্র রপ্তানি করতে থাকে।
রপ্তানির পাশাপাশি অ্যামেরিকা তখন ঋণ দিয়েও লাভবান হচ্ছিল। অ্যামেরিকার কাছে স্বর্ণ বন্ধক রেখে ইউরোপ তখন প্রচুর পরিমাণ ঋণ সহায়তা নিতে থাকে। দখলদার ইউরোপীয় দেশগুলো সারা দুনিয়া থেকে যে স্বর্ণগুলো এনে নিজেদের দেশে জমা করেছিল তা তখন অ্যামেরিকার কাছে গিয়ে জমা হয়। একদিকে ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানির জন্য অ্যামেরিকাতে হাজার হাজার কল-কারখানা গড়ে উঠছিল। অন্যদিকে জমা হচ্ছিল রাশি রাশি স্বর্ণ। সব মিলিয়ে অ্যামেরিকার অর্থনীতি এক লাফে ফুলে ফেঁপে উঠে। যত উৎপাদন, তত কারখানা, তত কর্মসংস্থান। আর বাজার যেহেতু রেডি, তাই পণ্য উৎপাদন নিয়ে উদ্যোক্তাদের কোনো চিন্তা করতে হয়নি। ফলে বিনিয়োগ করা নিয়েও কোনো সমস্যা ছিল না। যারা বিনিয়োগ করছিল তাদের প্রায় সবাই লাভবান হচ্ছিল। এভাবে অর্থনীতি ফুলে ফেঁপে উঠে, শেয়ার বাজারও দারুণ উন্নতি করে।
কিন্তু বিশের দশকের শেষের দিকে এসে হঠাৎ করেই এই অগ্রগতি ঝিমিয়ে পড়ে। কারণ অ্যামেরিকার এই অস্বাভাবিক উন্নতি হয়েছিল মূলত ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করে। আর সেই ইউরোপ ততদিনে যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ইউরোপের কৃষকরা একটা পর্যায়ে পুরোদমে ফসল উৎপাদন শুরু করে দেয়। একইসাথে শুরু হয় অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন। ফলে ইউরোপের বাজার টার্গেট করে অ্যামেরিকা যে বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদন শুরু করেছিল সেগুলো তখন বিক্রির অভাবে নষ্ট হচ্ছিল। বিশেষ করে সমস্যায় পড়ে কৃষকরা। খাদ্য শস্য সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, আর এগুলো সংরক্ষণ করাটাও কঠিন। বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের বিক্রি যদি একদম কমে যায় তখন কৃষকদের ভরাডুবি নিশ্চিত। কৃষিপণ্যের বাজার খারাপ হলে সেটার প্রভাব শিল্পখাতেও পড়বে। এই বিষয়টাই আন্দাজ করেছিল ঐ সময়ের ঋণ-দাতারা। ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন ব্রোকারদের থেকে মানুষ তখন ঋণ নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করত। ঋণদাতারা কৃষকদের পরিস্থিতি দেখে বুঝে ফেলে যে সামনে শিল্প কারখানাতেও এর প্রভাব পড়বে। ফলে তাদের ঋণের টাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তারা ঋণগ্রহীতাদের চাপ দিতে থাকে। চাপের কারণে ঋণগ্রহীতারা শেয়ার বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ করেই শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। ধ্বস নামে শেয়ার বাজারে। আর শেয়ারবাজারের এই ধ্বস চেইন রিঅ্যাকশনের মত ছড়িয়ে পরে গোটা দেশের অর্থনীতিতে। একে একে বন্ধ হয়ে যায় শিল্প-কারখানাগুলো। দেউলিয়া হয়ে যায় শত শত ব্যাংক। গুদাম বোঝাই মালামাল কেনার মত কোনো ক্রেতা ছিল না। অন্যদিকে ইউরোপে রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমেই আসছিল। সবকিছু মিলিয়ে অ্যামেরিকা প্রবেশ করে তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুগে- “দ্যা গ্রেট ডিপ্রেশন”।
কিন্তু এই মহামন্দা থেকে একদল অর্থনীতিবিদ আধুনিক অর্থনীতির মূলকথাটা নতুন করে উপলব্ধি করেন। এই ধারার অর্থনীতিবিদরা “অস্ট্রিয়ান স্কুল” নামে পরিচিত ছিল। এরা মূলত লুডভিগ ভন মাইসেসের মত অর্থনীতিবিদদের অনুসারী।
অস্ট্রিয়ান স্কুলের অর্থনীতিবিদদের ঠিক বিপরীত চিন্তা করতেন “কেইনসিয়ান স্কুলের” অর্থনীতিবিদরা। এরা ছিলেন মূলত জন মেনার্ড কেইনসের অনুসারী।
অস্ট্রিয়ান স্কুলের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন- দেশের অর্থনীতির উত্থানের সময়টা খুব জটিল। এই সময় সরকারকে খুব হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায়ই ভুল হয়। সেই ভুলগুলো শুধরানোর জন্য বা ব্যালেন্স করার জন্য তখন একটা মন্দার প্রয়োজন হয়। তাই এই ধারার অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির কৃত্রিম উত্থান রোধ করার দিকেই বেশি নজর দিতে চান।
অন্যদিকে, কেইনসিয়ানরা মনে করেন দেশের অর্থনীতিকে সবসময় চাঙ্গা রাখতে হবে। আর এই চাঙ্গা রাখার জন্য সরকারের যা যা করা দরকার সরকার সেটাই করবে। দরকার হলে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দেবে, সুদের হার কমিয়ে দেবে, কর মওকুফ করবে, ব্যাংক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বেইলআউট দিয়ে সহায়তা করবে। ক্ষেত্রবিশেষ বড় অংকের প্রণোদনাও দেওয়া লাগতে পারে।
অর্থাৎ, কেইনসিয়ানদের নজর যেখানে ছিল অর্থনৈতিক পতনকে আটকে দেওয়ার দিকে, সেখানে অস্ট্রিয়ানদের দৃষ্টি ছিল কৃত্রিম অর্থনৈতিক উত্থান রোধ করার দিকে। কেইনসিয়ানরা বাজার চাঙ্গা রাখার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া থেকে শুরু করে যা যা করার দরকার তার সবকিছু করতেই সরকারকে পরামর্শ দিত। কিন্তু অস্ট্রিয়ানরা ছিল এসবের বিপক্ষে।
গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় অ্যামেরিকার সরকার কেইনসিয়ানদের নীতি অনুসরণ করে। কেইনসিয়ানদের নীতিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সুবিধাজনক। কারণ এই নীতির ফলে সরকার যেহেতু নিজের ইচ্ছেমত টাকার সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারে, তাই কর বৃদ্ধি না করেও দেশের উন্নয়ন করা যায়। জনগণকে সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণ দেওয়া যায়। এতে সরকারের নির্বাচনী প্রচারণাতেও সুবিধা হয়, আবার জনগণও খুশি হয়। এইসব সুবিধার কারণে দিন দিন অস্ট্রিয়ানদের বদলে কেইনসিয়ানদের নীতিগুলো বেশি জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু অস্ট্রিয়ান স্কুলের অর্থনীতিবিদরা এই নীতিগুলোর বিপক্ষে। তারা মনে করেন এভাবে কৃত্রিম উত্থান ঘটানো দীর্ঘমেয়াদে একটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ব্যাপার। এতে একটি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের সরকার কেইনসিয়ানদের নীতিগুলো ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করেন। আর তারপর থেকে অ্যামেরিকা মূলত কেইনসিয়ান নীতি মেনেই দেশ পরিচালনা করছে।
তাহলে কেইনসিয়ানদের নীতিগুলোই কি একটি দেশের অর্থনীতির জন্য বেশি উপযুক্ত? উত্তর হচ্ছে- না।
কিন্তু আমরা তো দেখতে পাচ্ছি অ্যামেরিকা এখনও সারা পৃথিবীর অর্থনীতির একটা বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কেইনসিয়ান নীতি যদি একটি দেশের জন্য ভয়াবহই হয়ে থাকে, তাহলে অ্যামেরিকা এখনও তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে কীভাবে? অর্থ্যাৎ আমেরিকা যেভাবে ইচ্ছেমত ডলার ছাপিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে তেমনটা যদি অন্য কোনো দেশ করত তাহলে সেই দেশের অবস্থা কি আমেরিকার মতো হতো? জিম্বাবুয়ে কিন্তু ঠিক এই কাজটাই করেছিল । জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির অবস্থা কতটা ভয়াবহ সেটা একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে দেশটিতে ইনফ্লেশনের হার ছিল ৭৯,৬০০,০০০,০০০%। এই ধরনের ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি জিম্বাবুয়েতে একটা নিয়মিত ঘটনা। এই ভয়াবহ অবস্থা এখনও ঠিক হয়নি।
অথচ অ্যামেরিকা বছরের পর বছর এই কাজটাই করে যাচ্ছে। তারা ইচ্ছামতো ডলার ছাপছে অথচ তাদের অর্থনীতি এখনও টিকে আছে খুব ভালোভাবেই। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব?
আসলে অ্যামেরিকার এমন অগ্রগতি ধরে রাখার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আমেরিকার ডলার রিজার্ভ স্ট্যাটাস।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে “ব্রেটন উডস মনিটারি কনফারেন্স” নামে একটি অর্থনৈতিক সম্মেলন হয় অ্যামেরিকার ব্রেটন উডস শহরে। এই সম্মেলনে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের বড় বড় ৪৪ টি দেশের সাতশরও বেশি প্রতিনিধি এসে হাজির হয়। এই সভায় অ্যামেরিকা একটা বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ছিল প্রতিটি দেশ যেন তাদের নিজেদের মুদ্রাকে স্বর্ণের পরিবর্তে আমেরিকান ডলার দিয়ে ব্যাক দেয়। অর্থাৎ অ্যামেরিকা মূলত আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বর্ণের পরিবর্তে ডলার ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। সেই সময়ের আগে দুই দেশের মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হত স্বর্ণের ভিত্তিতে । ব্রেটন উডস-এর নীতিতে গৃহীত হয় যে তখন থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হার স্বর্ণের পরিবর্তে ডলারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। আর ডলারের মান নির্ধারিত হবে স্বর্ণের ভিত্তিতে। মূলত এখান থেকেই মার্কিন ডলারের রাজত্ব শুরু হয়।
অনেকেই ভাবতে পারেন ১৯৪৪ সালে যখন অ্যামেরিকা ৪৪টি দেশকে এই অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়েছিল তখন তারা এই প্রস্তাব মেনেই বা নিয়েছিল কেন? আসলে দুইটি বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিই একদম ভেঙ্গে পড়েছিল। কিন্তু অ্যামেরিকা যুদ্ধে জড়ালেও তার অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। অন্যদিকে এই দেশগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচুর সাহায্য করেছিল। পাশাপাশি অ্যামেরিকা প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৫ ডলার করে দিতে চেয়েছিল। যা ঐ সময়ের জন্য ছিল বেশ লাভজনক প্রস্তাব। আবার দেশটি তখন ছিল বিশ্বের ৮০ শতাংশ স্বর্ণের মালিক। অর্থাৎ ডলারকে ব্যাক দেওয়ার জন্য, ডলারের মান স্থিতিশীল রাখার জন্য তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ স্বর্ণের মজুদ ছিল। তাই সবদিক বিবেচনা করে এই প্রস্তাবটি সবাই মেনে নেয়। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা ভাল যে এই ‘ব্রেটন উডস’ চুক্তির ভিত্তিতেই আজকের বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দুইটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান “আইএমএফ” এবং “বিশ্বব্যাংক” প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এদিকে ফেডারেল রিজার্ভের কেইনসিয়ান মানি ম্যানেজারদের কারণে অ্যামেরিকাতে নিয়মিতই মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে থাকে। ডলারের মান ক্রমাগত কমতে থাকে। এতে দেশগুলো ডলারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ইউরোপ ও জাপানের অর্থনীতি উন্নত হতে শুরু করে এবং তারা ডলার জমা দিয়ে আমেরিকান রিজার্ভে থাকা স্বর্ণ তুলে নিতে শুরু করে। ১৯৬৫ সালে ফ্রান্সের নেতৃত্বে বিদেশি সরকারগুলো ফেডারেল রিজার্ভের নোট জমা দিয়ে স্বর্ণ তুলে নিতে শুরু করে। ইতিহাসে এই ঘটনাটা ‘গোল্ড ড্রেইন’ নামে পরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশ এই গণহারে স্বর্ণ উত্তোলনে অংশ নেয়। ১৯৩২ সালের পুরনো দামে স্বর্ণ কেনার সুযোগ পাওয়ার ফলে বিদেশি সরকারগুলো খুব দ্রুতই মার্কিন রিজার্ভ খালি করে ফেলে।
অন্যদিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে আমেরিকা প্রচুর কাগজের ডলার ছাপায় । ফলে স্বর্ণ ও ডলারের সংযোগ টিকিয়ে রাখাটা মার্কিন সরকারের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। স্বর্ণ উত্তোলন বন্ধ করার কোনো পথ দেখতে না পেয়ে অ্যামেরিকার সরকার বিভিন্ন আইন পাশ করে ধীরে ধীরে স্বর্ণ উত্তোলনের সব পথই বন্ধ করে দেয়। মার্কিন সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য সেই ১৯৩৩ সালেই ডলার দিয়ে স্বর্ণ উত্তোলনের পথ বন্ধ করেছিল। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ঘোষণা করেন যে এখন থেকে মার্কিন ডলারের মান আর স্বর্ণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হবে না। এই ঘোষণাটি ‘নিক্সন শক’ হিসাবে পরিচিত। এই ঘোষণার ফলে মার্কিন ডলার কোনো প্রকৃত মূল্যবান বস্তুর ব্যাকআপ ছাড়াই শুধু ‘ফিয়াট মানি’তে পরিণত হয়। এতে করে একটু সময়ের জন্য ডলার মান কমে গেলেও মার্কিনদের সামনে আরেকটা সুযোগ এসে হাজির হয়।
১৯৭৩ সালে সৌদি আরবের সাথে আমেরিকা একটি গোপন চুক্তি করে। সেই চুক্তিতে ঠিক হয় সৌদি আরব এখন থেকে কেবল মাত্র অ্যামেরিকান ডলারেই তাদের তেল বিক্রি করবে এবং এর বিনিময়ে অ্যামেরিকা সৌদিকে সামরিক নিরাপত্তা দিবে। ১৯৭৫ সালে অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী রাষ্টগুলোও একই নীতি অনুসরণ করে। অর্থাৎ তেলে বিক্রি হবে কেবল মার্কিন ডলারে। জন্ম হয় পেট্রোডলারের। এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্য সৃষ্টি টিকে আছে। ইউরো আসার আগ পর্যন্ত ডলারের একক আধিপত্য ছিল। এখন কিছুটা কমে গেলেও সেই আধিপত্য এখনও টিকে আছে। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের ষাট শতাংশের বেশি টাকা এই ডলারেই মজুদ রয়েছে।
একদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার সারা বিশ্বেই গৃহীত হচ্ছে। আর অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভ চাইলেই এখন ইচ্ছেমত ডলার ছাপতে পারছে। এই কারণেই মূলত অ্যামেরিকার অর্থনীতি এখনও বহাল তবিয়তে আছে। শুধু একবার ভেবে দেখুন- আপনার কাছে এমন একটা টাকা ছাপানোর মেশিন আছে যে মেশিন দিয়ে যত খুশি টাকা ছাপতে পারবেন, আবার সেই টাকা বিশ্বের সব দেশের মানুষই গ্রহণ করবে! ১৯৭১ সালের পর থেকে অ্যামেরিকা মূলত এই সুবিধাটাই পেয়ে আসছে।
আর এরপর থেকেই মূলত অ্যামেরিকার সরকার চাইলেই নিজের ইচ্ছেমত ডলার ছাপতে পারে। কিন্তু ডলার ছাপলেই তো আর সব সমস্যা সমাধান হয় না। কেইনসিয়ান নীতির কারণে দেশটিতে নিয়মিত মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতি চলতেই থাকে। আর যখনই মন্দার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখনই দেশটি রাষ্ট্রীয় ঋণ তৈরি করে ডলার ছাপিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করে। এভাবে ডলার ছাপতে ছাপতে অ্যামেরিকার রাষ্ট্রীয় ঋণ এখন ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এই ঋণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আসলে সেই গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় থেকেই অ্যামেরিকার অর্থনীতি মূলগতভাবে অবনতির দিকেই চলেছে। অথচ এই অ্যামেরিকা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য দেশ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ১৫০ বছর ধরে জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগতভাবে কমেছে। সময়টা ছিল ১৭ শতকের শেষ দশক থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত। এই অ্যামেরিকার অগ্রগতি শুধু যে আর্থিক দিকে হয়েছিল তা কিন্তু নয়। এখানে ছিল সীমিত ক্ষমতার সরকার। অর্থাৎ, সরকারের হাতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা ছিল, কিন্তু সেটা নাগরিকদের সুবিধার জন্য, দেশের সুবিধার জন্য। এর বাইরে গেলেই সেটার লাগাম টেনে ধরা হতো। এখানে জন্ম নিয়েছিল মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা। দাসত্ব বাতিল হয়েছিল। একসময় যারা আয়কর দিত তারাই শুধু ভোট দিতে পারত। একটা পর্যায়ে এসে সবার জন্য ভোটাধিকার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, অ্যামেরিকার অগ্রগতি হয়েছিল ধীরে ধীরে একদম সঠিক পথে। কিন্তু কেইনসিয়ান অর্থনীতির নীতি প্রয়োগের পর থেকে দেশটির অর্থনীতি যেমন খারাপ হতে থাকে তেমনই জনগণের স্বার্থও লঙ্ঘিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাষ্ট্র বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। বিলুপ্ত হতে থাকে সীমিত ক্ষমতার সরকার। এতে সরকার চাইলে অর্থবাজারের উপর ইচ্ছামত প্রভাব খাটাতে পারে।
এখন অ্যামেরিকা যেভাবে তার রাষ্ট্রীয় ঋণ বাড়িয়ে চলেছে সেটার ভবিষ্যৎ আসলে কী? কোনো কারণে যদি অ্যামেরিকা তার রিজার্ভ স্ট্যাটাস হারিয়ে ফেলে তাহলে অ্যামেরিকার অর্থনীতি কোন দিকে মোড় নেবে? অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন এটা একটা অবাস্তব চিন্তা। আধুনিক পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমা বিশ্ব, আর পশ্চিমা বিশ্বের মুরুব্বি হচ্ছে অ্যামেরিকা। তাই অ্যামেরিকান ডলার তার রিজার্ভ স্ট্যাটাস হারাবে না। কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই যে কোনো বিশেষ ব্যবস্থাই চিরকাল স্থায়ী হয় না। ইতোমধ্যে চীন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বে ব্রিকস নামে একটি নতুন আন্তঃদেশীয় সংগঠন তৈরি হয়েছে। এই সংগঠন বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চায়। এজন্য সংগঠনটি সেই পুরনো দিনের মত স্বর্ণ ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা চালু করতে চায়। ব্রিকসের পরিকল্পনা যদি ধীরে ধীরেও বাস্তবায়ন হয় তবুও অ্যামেরিকার অর্থনীতির জন্য তা সমূহ বিপদ ডেকে আনবে। আর কোনোদিন যদি ডলার তার রিজার্ভ স্ট্যাটাস পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে, তাহলে অ্যামেরিকার অর্থনীতি তাসের ঘরের মত নিমেষেই ভেঙ্গে যাবে।
পিটার শিফ নামে এক বিখ্যাত অ্যামেরিকান স্টক ব্রোকার এবং অর্থনীতিবিদ অ্যামেরিকার অর্থনীতির এই নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে একটি গল্প তৈরি করেছেন। এটাকে আসলে গল্প বললে ভুল হবে। বাস্তব পৃথিবীর ঘটনা লেখা হয়েছে গল্পের ছদ্মবেশে। যেমনটা করা হয়েছিল জর্জ অরওয়েলের “এনিম্যাল ফার্ম” বইতে। ঠিক একই কাজ করেছিলেন জোনাথন সুইফট তাঁর “গালিভার ট্রাভেলস” বইতে। তেমনই পিটার শিফও অ্যামেরিকা তথা সারা বিশ্বের অর্থনীতির ইতিহাসকে নিয়ে লিখে ফেলেছেন একটা রূপক গল্প, আস্ত একটা বই।
ইতিহাস কি সেটাতো আমরা চাইলেই অর্থনীতির ইতিহাস থেকে পড়ে নিতে পারি। কিন্তু পিটার শিফ কল্পনার আশ্রয় নিয়ে এখানে আমাদের ভবিষ্যৎটাও দেখিয়ে দিয়েছেন। সেখানে দেখা যায় অ্যামেরিকা তার রিজার্ভ স্ট্যাটাস হারানোর পর চীন এসে অ্যামেরিকার সবকিছু কিনে নেয় এবং দেশটিকে আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংস করে ফেলে। এমনটা নাও হতে পারে। তবে এই গল্পটি আসলে আমাদের অর্থনীতির একদম বেসিক নীতিগুলো শেখায়। আজকের দিনের পৃথিবীতে যে ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলছে- সেটা আসলে কীভাবে পরিচালিত হয় এই বইটিতে তা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। একদিক থেকে দেখতে গেলে এই বইটা হলো অ্যামেরিকার অর্থনীতি নিয়ে। আবার অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে এই বইটা হলো একটি দেশের অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হয় তার মূল কাঠামোটি নিয়ে।
আধুনিক অর্থনীতি খুবই জটিল। অর্থনীতির ছাত্র না হয়ে এই জটিল বিষয়গুলো বুঝা এক অর্থে প্রায় অসম্ভব। সেই অসম্ভব কাজটাই করেছেন এই বইয়ের লেখক।
নির্জন একটা দ্বীপে তিনজন মানুষ বাস করত। ছোট্ট এই দ্বীপে তেমন কোন খাদ্য ছিল না, পাওয়া যেত শুধু এক ধরনের মাছ। সারাদিন পরিশ্রম করে ওরা একটি করে মাছ ধরতে পারত, আর সেটা দিয়ে তাদের শুধুমাত্র একদিনের খাবারের চাহিদা মিটত। অর্থাৎ ওরা একরকম দিন এনে দিন খেত। ফলে এই দ্বীপের কোন ইকোনোমি ছিল না। কিন্তু একদিন ওদের একজনের মাথায় একটা দারুণ আইডিয়া আসে। সে এমন একটা মাছ ধরার যন্ত্র তৈরি করে যাতে করে অনেকগুলো মাছ ধরা যায়। সে বাড়তি মাছ ধরত এবং লাভের বিনিময়ে বাকি দুইজনকে মাছ ধার দিত। ফলে দ্বীপে প্রথমবারের মত পুঁজি তৈরি হলো, ক্রেডিট বা ঋণ তৈরি হলো।
এই বইয়ের লেখকরা একটা ইনক্রেডিবল কাজ করেছেন। এই সরল ঘটনাকে গল্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তারা একদম জটিল পর্যায়ে নিয়ে গেছেন! একটা পর্যায়ে গিয়ে দ্বীপে একটা রিপাবলিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্য দ্বীপ থেকে অভিবাসী আসে। দ্বীপের সরকার টাকা প্রচলন করে। সেখানে বিভিন্ন ঘটনার কারণে ইনফ্লেশন হয়। সেগুলো কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে সেটাও গল্পের মধ্যে দেখানো হয়। অর্থাৎ একটা দেশের অর্থনীতি কীভাবে পরিচালিত হয় সেটাকে এই বইয়ের লেখকরা ঐ দ্বীপের গল্পের মাধ্যমেই তুলে ধরেছেন। এক কথায় অবিশ্বাস্য। তবে লেখক শুধু গল্পেই থেমে থাকেননি। বাস্তবে অর্থনীতি কেমন হয় সেটাকেও ব্যাখ্যা করেছেন, পাশাপাশি উদাহরণ দিয়েও দেখিয়েছেন।
যারা অর্থনীতির ছাত্র নন কিন্তু একটা দেশের অর্থনীতি কীভাবে চলে সেই বিষয়টা ভালোমতো বুঝতে চান তাদের জন্য এই বই একটা অসাধারণ রিসোর্স। বইটি সানডে টাইমসে ১ নং বেস্ট সেলার হয়। বইটির লেখক পিটার শিফ বিখ্যাত স্টক ব্রোকার এবং অর্থনীতিবিদ। তিনি ২০০৮ সালের ডিপ্রেশনের আগেই সেটার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বলেও বেশ বিখ্যাত। বইটি আমরা পুঁথি প্রকাশনী থেকে বাংলা অনুবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছি। ইকোনোমিকস নিয়ে আগ্রহী পাঠক বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
Reviews
There are no reviews yet.